নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - Netaji Subhash Chandra Bose in Bengali

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ

 নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর গভীর দেশপ্রেম, অদম্য মনোবল, আত্মত‍্যাগ এবং প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব‍্যর্থ সংগ্রামের কাহিনী ইতিহাসের পাতায় চিরকাল সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু



INDEX
  1. সূচনা :- 
  2. জীবনী :- 
  3. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাণী :-
  4. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজীর ভূমিকা :-
  5. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত ত্যাগ :- 
  6. জার্মানিতে সুভাষচন্দ্র বসু :- 
  7. দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ায় জাগরণ :-
  8. রাসবিহারী বসুর উদ্যোগ :-
  9. জাপানের সুভাষচন্দ্র বসু :- 
  10. সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ :- 
  11. নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু রহস্য :-


সূচনা :- 

 নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু  ও আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর গভীর দেশপ্রেম, অদম্য মনোবল, আত্মত‍্যাগ এবং প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব‍্যর্থ সংগ্রামের কাহিনী ইতিহাসের পাতায় চিরকাল সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
তৎকালীন একটি ধনী এবং অভিজাত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সুভাষচন্দ্র সুখস্বাচ্ছন্দ‍্যময় জীবনের মায়াজাল ত্যাগ করে দেশ ও জাতির সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা লাভ সম্পর্কে আশাবাদী সুভাষচন্দ্র লিখেছিলেন,  
"পৃথিবীতে এমন কোনো রাত্রি আসে নাই, যে রাত্রের প্রভাত হয় নাই। দুঃখের রাত শেষে অবশ্যই প্রভাত হইবে।"

 জীবনী :- 

২৩ শে জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম দিবস তথা জন্মদিন পালন করা হয়। ১৮৯৭ সালে ২৩ শে জানুয়ারি, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটক শহরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাদের আদি বাসস্থান ছিল চব্বিশ পরগনা জেলার কোদালিয়া গ্রামে। তার বাবা হলেন জানকীনাথ বসু এবং মাতা হলেন প্রভাবতী দেবী।
সুভাষের বাবা ছিলেন একজন প্রকৃত পক্ষেই মনে প্রাণে আইনজীবী। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রাথমিক পড়াশোনা সাধারণত কটক শহরে। প্রথমে স্টুয়ার্ড হাইস্কুলে পড়ে কলেজিয়েট স্কুলে।
সুভাষচন্দ্র বসু যে স্কুলে লেখাপড়া করতেন, সেই স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন বেনীমাধব দাস। যার প্রভাব সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনে অধিকতর ছিল। বিদ‍্যালয়ে থাকাকালীন আর একজন ব্যক্তি সুভাষের ওপর বেশ বড় রকমের প্রভাব বিস্তার করেছিল তিনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দ 
একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল করার পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।
সেই নামিদামি কলেজ থেকে তাকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছিল তার ভেতরে থাকা জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ এর কারণে।
এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ত‍্যাগ করে ইংল্যান্ডের পথে যাত্রা শুরু করে। এরপর তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ফিজউইলিয়ামে ভর্তি হন এবং সিভিল সার্ভিস  পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে শুধু পাশ করেননি সরাসরি তিনি নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসু তার বিপ্লব সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন । এবং এই প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বলেন-
"কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সবথেকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রন্থা হল তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করা।"

১৯২১ সালে  ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নেতাজিকে গ্রেপ্তার করে। ১৯২১ সালে ১ আগস্ট  নেতাজি জেল থেকে মুক্তি লাভ করে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে গয়া কংগ্রেস অধিবেশনে স্বরাজ দলে সযোগদান করেছিলেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু


এবং ১৯২৩ সালে তিনি ভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদে মনোনীত হন। এবং একই সঙ্গে বেঙ্গল কংগ্রেসের সেক্রেটারি হিসেবে বিবেচিত হন। নেতাজি দেশবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা "ফরওয়ার্ড " নামক একটি সম্পাদনা শুরু করেছিলেন।
এরপর ১৯২৪ সালে কলকাতার পৌর নির্বাচনে স্বরাজ দল একটি বিশাল সাফল্য অর্জন করেছিল। দেশবন্ধু "মেয়র" হয়েছিলেন আর নেতাজি প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সুভাষের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ব্রিটিশ সরকার কোনভাবেই প্রতিহত করতে পারেননি এবং অক্টোবরে ব্রিটিশ সরকার আবারো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেফতার করে নেয়।
তার বেশ কিছুদিন পর অতএব ১৯২৫ সালে দেশবন্ধু মারা যায়। জওহরলাল নেহেরুর সাথে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচিত হন
এবং ১৯২৮ সালে নেতাজি ভারতীয় কংগ্রেসের কলকাতার অধিবেশন চলাকালীন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করে। যাতে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী হন। এবং এই সংস্থার জেনারেল অফিসার ইন-কমান্ড পদে নেতাজী নির্বাচিত হন।
১৯৩০ সালে কারাগারে থাকাকালীন নেতাজি কলকাতার মেয়রের নির্বাচনে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ভগৎ সিং এর ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ১৯৩১ সালের ২৩ শে মার্চ।
এই সময় নেতাজী ও মহাত্মা গান্ধীর মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায়। ১৯৩২-৩৬ ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিদেশি নেতাদের চাপ দেওয়ার জন্য তিনি ইতালির মুসোলিনি, জার্মানির ফিল্ডার, আয়ারল্যান্ডের ভ‍্যালেরা এবং ফ্রান্সের রোমা - রোমানদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ১৩ এপ্রিল ১৯৩৬ সালে ভারতে পৌঁছে বোম্বেতে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। এবং ১৯৩৬-৩৭ সালে মুক্তির পর ইউরোপে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু "ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল " প্রকাশ শুরু করেছিলেন। হরিপুর অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি পদে ১৯৩৮ সালে নেতাজী নির্বাচিত হন।
ইতিমধ্যে শান্তিনিকেতনে বিশ্ব বিখ্যাত কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  তাকে সম্মানিত করেছিলেন। ১৯৩৯ সালে মহাত্মা গান্ধী  মনোনীত প্রার্থী সিতারামাইয়াকে পরাজিত করে কংগ্রেসের অধ‍্যক্ষ পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং তারপর তিনি "ফরওয়ার্ড ব্লক " প্রতিষ্ঠা করেন। তাকে নজরবন্দি করা হয়েছিল ১৯৪০ সালে এবং এদিকে দিনের পর দিন না খাবার কারণে তার শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ভেঙে পড়েছিল।
১৯৪১ সালের ৭ই জানুয়ারি একটি নাটকীয় ঘটনার মাধ্যমে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নিখোঁজ হয়ে আফগানিস্তান এবং রাশিয়া হয়ে জার্মানিতে পৌঁছায়। ১৯৪১ সালে ৯ এপ্রিল তিনি জার্মান সরকারকে একটি স্মারকলিপি জমা দেন যা অক্ষ এবং বিদ্যুতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়।
তিনি এ বছর নভেম্বর মাসে স্বতন্ত্র ভারত কেন্দ্র এবং স্বাধীন ভারত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৪৩ সালে নেতাজি নেভির সাহায্যে জাপানে যান এবং সেখানে গিয়ে তিনি টোকিও রেডিওতে ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে সম্বোধন করেছিলেন। এবং ১৯৪৩ সালে ২১ শে অক্টোবর আন্দামান ও নিকোবরে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে নামকরণ হয়েছিল "শহীদ "  "স্বরাজ "
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পারমাণবিক হামলা বেশ কিছুদিন পর নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন তবে এ বিষয়ে সঠিক নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।



নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর উক্তি বা বাণী :-

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবর্ষের চোখে একজন স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। ইতিহাসের পাতায় পাতায় ও মানুষের মনে তার নাম গভীর প্রভাবিত করেছে।
স্বাধীনতার ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। তার তুলনা স্বাধীন ইতিহাসে খুবই বিরল।
নেতাজী মানে শুধু কেবল মাত্র একটি মানুষকে বোঝায় না, বোঝায় দর্শন কে। এমন একজনের মানুষের দর্শন যা অন্তর্ধানকে স্বীকার করতে পারেননি কোটি কোটি মানুষ। আজও তাকে নিয়ে যথেষ্ট রহস্যের বেড়াজালে চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে।
স্বাধীনতার অর্ধশতক পার করেও ভারতবাসীর চোখে আজও সেরা বীরের নাম সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান জুড়ে আছে তিনি আর কেউ নয় সবার পরিচিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
তাঁর ফেলে যাওয়া এমন কিছু কথা বা উক্তি এবং দর্শন রয়েছে যা আজও ভারতবাসী সকল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বলে যাওয়া ১৫টি উক্তি রয়েছে। সেগুলি হল--- 
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাণী 

  1. "আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।" 
  2. "একটা আদর্শকে খাড়া করতে একজন মরে যেতে পারে, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সে আদর্শ নিজে থেকে হাজার হাজার মানুষের আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগিয়ে তোলে।" 
  3.  "স্বাধীনতা কেউ দেয় না, ছিনিয়ে নিতে হয়।" 
  4.  "রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করাটা আমাদের কর্তব্য। যে স্বাধীনতা আত্মত্যাগ ও শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে অর্জন করা যাবে তাকে আমরা আমাদের শক্তি দিয়ে রক্ষা করার মতো স্বাবলম্বী হব।" 
  5.  "স্বাধীন ভারতের স্বপ্নে কখনও আস্থা হারিও না। বিশ্বে এমন কোন শক্তি নেই যে ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখতে সমর্থ হবে। ভারত স্বাধীন হবেই এবং সেটা খুব শীঘ্রই।
  6.  "একটা আকাঙ্ক্ষাকে আজই আমাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। আর সেটা হল আত্ম বলিদানের। যা ভারতকে বাঁচিয়ে রাখবে।"
  7. "ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনও পরিবর্তন আলোচনার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।" 
  8.  "ভুলে যেওনা গুরুতর অপরাধ, অবিচার অন্যায়ের সঙ্গেই সমঝোতা করতে শেখায়। তবে স্মরণ কর অন্তরাত্মাকে। যদি কিছু পেতে হয় তাহলে তোমাকে দিতে হবে।"
  9. "রাজনৈতিক দরকষাকষির একটা গোপন দিক হলো যে এটা দেখতে খুব শক্তিশালী মনে হয় কিন্তু, কখনোই তোরার বর্তমান অবস্থাকে ব্যাখ্যা করে না।" 
  10.  " দৃঢ় প্রতিজ্ঞ জাতীয়তাবোধ, সঠিক বিচার ও আদর্শেই ইন্ডিয়ান আর্মি অফ লিবেরেশন কে তৈরি করতে হবে।" 
  11.  "একজন সৈনিক হিসাবে সব সময় তিনটি জিনিসের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে, সেগুলি হল আনুগত্য, দায়িত্ব এবং বলিদান। যদি নিজেকে সত‍্যি অপরাজেয় করতে চাও তাহলে তিনটি আদর্শকে হৃদয়ের অন্তর থেকে জাগ্রত করতে হবে।" 
  12.  আমাদের জীবনকে এমন একটা তত্বের উপর ভিত্তি করে গড়তে হবে যেখানে অনেক বেশি সত‍্য রয়েছে। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে চূড়ান্ত সত্য সম্পর্কে ধারণা নেই বলে চুপ করে বসে থাকব।" 
  13.  "ভারত ডাকছে। রক্ত আহবান করছে। উঠে দাঁড়াও। কোনও কিছু হারানোর সময় নেই। হাতে অস্ত্র তুলে নাও। দিল্লি যাওয়ার রাস্তাটা হলো স্বাধীন হওয়ার রাস্তা। চলো দিল্লি।" 
  14.  "শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কে তখনই হারানো সম্ভব যখন একটা বাহিনী নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং ভয়ডরহীনতা ও অপরাজেয় হওয়ার মতো মানসিকতা তৈরী করতে পারবে।" 
  15. "শুধু মানুষ, অর্থ এবং সামগ্রী দিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। আমাদের মধ্যে একটা চালিকাশক্তির প্রেরণা থাকতে হবে যা সাহসী পদক্ষেপ নিতেও নায়কোচিত কর্মদ‍্যোমে উদ্ভুত করবে।"  

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর এই উক্তিগুলি কতটা যুক্তিপূর্ণ ও খাঁটি তা তিনি তাঁর জীবন দিয়েই সকলকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। এগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিখ্যাত উক্তিটি হল,

 তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।

"Give me Blood, and I shall give you Freedom" 

 হিন্দিতে বলা হয়-
তুম মুঝে খুন দো, ম‍্যায় তুমহে আজাদি দুঙ্গা।
এই উক্তি হল "ভারতের জয়" বা "জয় হিন্দ" যা কিনা পরবর্তীতে ভারত সরকার গ্রহণ করে নেয়।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজীর ভূমিকা :- 

 ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম চিরকাল সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। কারণ তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশকে পরাধীনতার আবরণ থেকে মুক্ত করার জন্য।
বিশ্ব ইতিহাসে তাঁর অবদান সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। 


নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
সুভাষচন্দ্র বসু



 নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত ত্যাগ :- 

 সুভাষচন্দ্র বসু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইংরেজরা কোন দিনই. ভারতকে স্বাধীনতা দেবে না। তাই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।
এর ফলে সরকার আতঙ্কিত হয় যে, বিশ্বযুদ্ধের সুযোগে সুভাষচন্দ্র ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। এর জন্য যুদ্ধ শুরু হলে সরকার নেতাজীকে "ভারত রক্ষা আইনে" গ্রেফতার করে নেয় ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই । এবং কারাগাড়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কলকাতায় নিজের বাড়িতে পুলিশি পাহারায় অন্তরীণ রাখা হয় অন্তরীণ অবস্থায় সুভাষচন্দ্র সশস্ত্র পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি
ড: অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে, রবীন্দ্রনাথ যাকে দেশনায়ক বলে গ্রহণ করেছিলেন। ভাগ্যের পরিহাসে তাকে দেশ ত্যাগ করতে হলো । 

 জার্মানিতে সুভাষচন্দ্র বসু :- 

 রাশিয়া সাহায্য লাভের বিফল হয়ে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ সুভাষচন্দ্র সেখান থেকে বিমানে জার্মানিতে উপস্থিত হন। এবং হিটলার ও মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারা তাকে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বতোভাবে সহায়তাদানের প্রতিশ্রুতি দেয়।
হিটলারের সঙ্গে নেতাজি
হিটলারের সঙ্গে নেতাজি


জার্মান সরকারের সাহায্যে বার্লিনে "আজাদ হিন্দুস্তান" বেতার কেন্দ্র স্থাপন করা হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে। নাম্বিয়ার নামে একজন দেশপ্রেমিক এই কেন্দ্রের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এই বেতার কেন্দ্র থেকে ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাতে থাকেন।
জার্মানীর হাতে বন্দি ভারতীয় সৈন্য নিয়ে সুভাষচন্দ্র ডিসেম্বর মাসের ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে "স্বাধীন ভারতীয় লিজন (Free Indian Legion)" নামে সেনাদল গঠন করেন।এই সেনাবাহিনীর প্রতীক ছিল "উল্লম্ফনকারী ব‍্যাঘ্র।"

এই সেনাদল সুভাষচন্দ্রের দেশপ্রেম ও বিপ্লবী আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সর্বপ্রথম তাকে "নেতাজি " অভিধায় ভূষিত করে এবং "জয় হিন্দ " ধ্বনি দিয়ে অভিবাদন জানায়। 

 দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ায় জাগরণ :-

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটে । জাপান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর  মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে ।
জাপানের হাতে সিঙ্গাপুরের পতন (১৫ ফেব্রুয়ারি , ১৯৪২ খ্রি .) ঘটে এবং জাপানের হাতে ১৪ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের মােহন সিংসহ প্রচুর ভারতীয় সেনা বন্দি হয় । জাপান বন্দি সেনাদের ভারতে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশদের দুর্বল করার উদ্যোগ নেয়।
জাপান সরকারের প্রস্তাবে মােহন সিং - এর নেতৃত্বে বন্দি সৈন্যরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যােগ দিতে রাজি হয় । তার চেষ্টায় ২৫ হাজার ব্যক্তি এই সেনাদলে যােগদান করে । এই সংখ্যা শীঘ্রই ৪০ হাজারে পৌছােয় । 

 রাসবিহারী বসুর উদ্যোগ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রখ্যাত ভারতীয় বিপ্লবী রাসবিহারী বসু (১৮৮৬-১৯৪৫ খ্রি .) জাপানে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সক্রিয় ছিলেন । তিনি "পূর্ব এশিয়ায় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জনক" নামে রিচিত ।
তার সভাপতিত্বে ব্যাংককে দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী দেশপ্রেমিক ভারতীয়রা এক সম্মেলনে মিলিত হয় ১৫ জুন , ১৯৪২ খ্রি . ) । এই সম্মেলনে "ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স লিগ" বা "ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ" গঠিত হয় এবং রাসবিহারী বসু এর সভাপতি নিযুক্ত হন ।
এই সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসুকে জার্মানি থেকে জাপানে আহবান করার প্রস্তাব গৃহীত হয় । রাসবিহারী বসু ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর  সিঙ্গাপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ ’ গঠন করেন । প্রতিষ্ঠার সময় মােহন সিং ছিলেন এর প্রধান সেনাপতি । 



ঐক্য, আত্মবিশ্বাস ও আত্মােৎসর্গ — এই তিনটি দর্শের ভিত্তিতে এই সেনাদল ভারতবর্ষকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালায় ।

জাপানের সুভাষচন্দ্র বসু :- 

 সুভাষচন্দ্র বুঝতে পেরেছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে কোন দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা সহজ হবে। তাই তিনি সাবমেরিনে কয়েক হাজার মাইল বিপদসংকুল সমুদ্রপথ অতিক্রম করে জাপানের রাজধানী টোকিওতে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন  হাজির হন।
ওই সময়ে প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জাপানের হাতে বন্দী ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে একটি সেনাবাহিনী গঠন করে। এবং সুভাষকে সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আহ্বান জানায়। দায়িত্ব গ্রহণ করে সুভাষচন্দ্র বসু এই বাহিনীর নাম "আজাদ হিন্দ ফৌজ ।" 
 

সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ :- 

 সুভাষচন্দ্রের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব অনুপ্রেরণা আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সদস্য নতুন প্রেরণা লাভ করে। ভারতবর্ষ যখন হিন্দু-মুসলমানের ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত, জাতীয় নেতৃবৃন্দ যখন নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিরাপদ করতে তৎপর, তখনই ভারতমাতারই এক বীর সন্তান সুভাষচন্দ্র নিজের জীবন বিপন্ন করে বিদেশের মাটি থেকে দেশমাতার মুক্তির জন্য এক দুঃসাহসী লড়াইয়ের সূচনা করেন।
সিংহাসন লাভ নয়, দেশমাতার মুক্তিই ছিল তাঁর সাধনা। 
  1.  নেতাজি সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ সরকার তৈরি করে। নেতাজি ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি  রেঙ্গুন এ যান এবং সেখানে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রধান কর্মকেন্দ্র স্থানান্তরিত করেন। 
    সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ
    সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ
  2.  সুভাষের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতে প্রবেশ করে এবং কোহিমা বিষেণপুর দখল করতে সমর্থ হয়। এবং তারা স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। 
  3.  তাঁর পরিকল্পনা ছিল ইংরেজদের পরাজিত করে দিল্লি নিজের দখলে আনা। তাঁর এই "দিল্লি চলো " আহবান সমস্ত সৈনিক এবং স্বাধীনতাকামী মানুষের মনে এক বিশেষ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। 
  4.  আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিপর্যয়ের ফলে জাপানের প্রত্যাবর্তনে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বর্ষা নামায় এবং সৈনিকদের নতুনতম খাদ্য ও রসদ এর অভাব আজাদ হিন্দ বাহিনীর চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। খাদ্য ভাব, প্রবল শীত, ম্যালেরিয়া, পার্বত্য অঞ্চলের বিষাক্ত পোকামাকড়ের প্রভৃতি কারণে কয়েক হাজার আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনার মৃত্যু ঘটে। 
  5.  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শেষ পযর্ন্ত জাপান ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৫ আগস্ট  মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনারাও অস্ত্র ত‍্যাগ করতে বাধ্য হয়। সহকর্মীদের পরামর্শে নেতাজি আত্মসমর্পণ থেকে বিরত থাকেন।
  6. কথিত আছে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৮ আগস্ট তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু হয়। কিন্তু এই কাহিনীর সততা সম্পর্কে অনেকের সন্দেহ প্রকাশ করেন। সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সেনাদের অবদানকে স্বীকার করে যে স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হয় তাতে ঐক্য, বিশ্বাস ও আত্মোৎসর্গ শব্দগুলি উল্লেখিত আছে। শব্দগুলি আজও আজাদ হিন্দ ফৌজের যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।



নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু রহস্য :-

 নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে সর্বদাই একটি বিতর্ক দেখা দেয়। তার মৃত্যু সম্পর্কে কয়েকটি মত রয়েছে।


#প্রথম,  মতটি সবথেকে বেশি প্রচলিত আছে । ১৯৪৫ সালে ১৮ আগস্ট  মাঞ্চুরিয়া যাওয়ার সময় তাইহোকুতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু হয়েছিল বলে একটি সরকারি দলিল পত্রে উল্লেখ করা আছে।
যদিও এর বিরুদ্ধে যথেষ্ট বিরোধীতাও রয়েছে। বর্তমানে জানা যায় যে, রেনকোজি নামক একটি মন্দিরের রাখা নেতাজির চিতাভস্ম পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে যে, সেটা নেতাজির চিতাভস্ম নয় । একাধিক কমিশন গঠন করা হয় বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুর সত্যতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কমিশন ছিল, যথা- শাহনওয়াজ কমিশন , খোসলা কমিশন-১৯৭০ , এবং মুখার্জি কমিশন । প্রথম দুটি কমিশন ওই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পক্ষেই তাদের মতামত দিয়েছেন।
বিচারপতি মনোজ মুখার্জির নেতৃত্বাধীন কমিশন দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে তথ্য সরবরাহ করেছিল। এবং তারা জানায় যে, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৮ আগস্ট ওই দিন সেখানে কোন বিমান দুর্ঘটনাই ঘটেনি।
যদিও এই তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে দেয় সরকার কোনো কারণ না দেখিয়েই। একমাত্র মুখার্জি কমিশন  বলেছিল তাঁর মৃত্যুর প্রমাণ সরূপ কোনো ডেথ সার্টিফিকেট নেই।
এমনকি নেতাজির গাড়ি চালকও জানিয়েছেন যে কোন বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি নেতাজির। কারণ তাঁর দাবি যে এই মৃত্যু প্রচলিত সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ঠিক চার মাস পর তিনি মায়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নামিয়ে দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। এবং তিনি এও জানান যে তিনি নিজেকে নেতাজির "আজাদ হিন্দ ফৌজের " একজন সদস্য বলে দাবি করেন।
#দ্বিতীয়ত, বোস: দ্যা ইন্ডিয়ান সামুরাই- নেতাজী ও আই-এন-এ সামরিক পরিসংখ্যান নামক একটি বইয়ে নেতাজির রাশিয়ায় যাওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। ২০১৬ সালে এই বইটি প্রকাশিত হয় বলে সাম্প্রতিক জানা যায়। এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জি. ডি. বকশি বইয়ে পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, বিমান দুর্ঘটনার ফলে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু ঘটেনি। 
 এই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তত্ত্বটি জাপানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দ্বারা ছড়িয়ে পড়েছিল যাতে নেতাজি পালিয়ে যেতে পারে। টোকিওতে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের সহায়তার বোস এই পরিকল্পনা করেছিল।
যখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জাপান থেকে পলায়ন করে তখন সুভাষ সার্বিয়া থেকে তিনটি রেডিও সিরিয়াল সম্প্রচার করেছিলেন। সেই সময় ব্রিটিশরা জানতেন যে সুভাষচন্দ্র বসু বেঁচে ছিলেন।
তাঁর জীবিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ব্রিটিশ সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারের কাছে সুভাষকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুরোধ করে এবং সেই জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুভাষচন্দ্র বসুকে এতটা নির্মম ভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল যে আঘাত সহ্য করতে না পেরে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল।
যদিও এই বিষয়টি অনেকেই মানতে চাই না। ঠিক এই সময় সবার মনে একটি প্রশ্ন বার বার ঘুরে ফিরে আসেছে যে, 
নেতাজি যদি জীবিতই থাকেন তাহলে কোথায় আছেন তিনি?
এইসব ব্যাপারে বিতর্কের অন্ত ছিল না। সবাই ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেন যে যার মতো। অনেকে বলেন, নেতাজি সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। এবং রাশিয়াতে যাওয়ার পর তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল সে ব্যাপারে তারা আবার ভিন্ন ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন।




কারো কারো দাবি ছিল, সুভাষ গিয়েছিল রাশিয়াতে। এবং সেখানকার সৈন্যরা তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করে রাখেন। এবং সেখানেই তিনি তার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আবার কেউ বলেন, সুভাষ এর মৃত্যু ঘটেছে সাবিয়াতে।
১৯৬৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী উজবেকিস্তানে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের সাথে তাসখন্দে চুক্তি করার পরেই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু ঘটে।
বলা হয় যে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে। অথচ তার চিকিৎসক আর. এন. চুং বলেন যে, ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী একদম সুস্থ ছিলেন। ওই বৈঠকের কিছু চিত্রে এমন একজনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় যার চেহারা ঠিক সুভাষচন্দ্রের সাথে সাদৃশ্যমান।
অনেক ফরেনসিক এক্সপার্টরাও ওই ব্যক্তিকে সুভাষ বলে দাবি করেছিলেন। 

#তৃতীয়, মতটি হল ফয়জাবাদের "ভগবানজি " ওরফে গুমনামি বাবাই হলে নেতাজি।
১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে মৃত্যু ঘটে। চেহারার কিছুটা মিল আছে তবে এমন দাবির পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ