বিসমার্ক (Otto von Bismarck)
১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে অটো ফন বিসমার্ক নামে এক কূটনৈতিক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হলে জার্মানির ঐক্য সাধনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এবং ১৮৭১ থেকে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ জার্মানির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিসমার্ক।
![]() |
অটো ফন বিসমার্ক |
INDEX
- ভূমিকা
- বিসমার্কের পরিচয়
- বিসমার্কের জীবনী
- বিসমার্কের জীবনী
- বিসমার্ক কূটনৈতিক রাজপুত বা জাদুঘর
- রাজনৈতিক দিক
- জার্মানির ঐক্যবদ্ধ
- রক্ত ও লৌহ নীতি
- ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ
- অস্ট্রো - প্রাশিয়া যুদ্ধ
- ফ্রাঙ্কো - প্রাশিয়া যুদ্ধ
- ফ্রান্সকে বিচ্ছিন্ন করা নীতি
- তিন সম্রাটের চুক্তি
- দ্বিশক্তি চুক্তি
- ত্রিশক্তি চুক্তি
- রি - ইনসিওরেন্স চুক্তি
ভূমিকা :-
অটো ফন বিসমার্ক ছিলেন জার্মান সাম্রাজ্যের এক মহানায়ক।
বিসমার্ক কে চ্যান্সেলর উপাধি দেয়া হয়। তিনি প্রশাসনে জার্মানির সংস্কার সাধন করেছিলেন। এক মুদ্রা, একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জার্মানির জন্য তৈরি করেছিলেন এবং একই দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের প্রবর্তন করেছিলেন।
১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে অটো ফন বিসমার্ক নামে এক কূটনৈতিক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হলে Germany-র ঐক্য সাধনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এবং ১৮৭১ থেকে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ জার্মানির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন Bismark।
বিসমার্কের পরিচয় :-
১ এপ্রিল ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন প্রাশিয়ার অন্তর্গত ব্রান্ডেনবার্গ এলাকায় এক উচ্চবিত্ত ধনী জমিদার পরিবারে।
অটো ফন বিসমার্ক জার্মান সাম্রাজ্যের স্থপতি এবং ১৮৬১ থেকে ১৮৯০ পর্যন্ত এর প্রথম চ্যান্সেলর ছিলেন। ইউরোপের রাজনীতির প্রধান নায়ক ছিলেন বিসমার্ক।
তার পূর্ণ নাম ছিল অটো এডুআর্ড লেওপোল্ড, ফুস্ট (রাজপুত) ফন বিসমার্ক, গ্রাফ (কাউন্ট) ফন বিসমার্ক - শ্যানহাইসেন, হেরৎসগ (ডিউক) ফন লাউয়েনবুর্গ (Otto Eduard Leopold von Bismarck)। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি রক্ষণশীল ছিলেন।
কিন্তু বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিসমার্ক চাতুর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন।
বিসমার্কের জীবনী :-
১ এপ্রিল ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়ার অন্তর্গত ব্রান্ডেনবার্গ এলাকায় এক উচ্চবিত্ত ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিসমার্ক। তিনি গ্যোটিঙেন ও বার্লিণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়েন।
ছাত্র জীবনে অটো ফন বিসমার্ক তেমন কোন প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেননি। পড়াশোনা শেষ করে তিনি প্রাশিয়ার সিভিল সার্ভিসের যোগদান করেছিলেন।
সরকারি চাকরির একঘেয়েমিতে তিনি বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন তাই কিছুদিন পর তিনি এই চাকরীর বর্জন বা ত্যাগ করেন। এবং তাঁর পিতার জমিদারের সামলান অটো ফন বিসমার্ক সংক্ষেপে বিসমার্ক।
১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে বিসমার্ক রাশিয়ার জাতীয় প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এবং দক্ষতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেন।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান পার্লামেন্ট নির্বাচিত হন। এবং জার্মানির এক অতি সংকটময় রাজনৈতিক সময়ে প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বযুগে পরিচিত হন। শ্রেষ্ঠ কূটনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে বিসমার্ক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নীত হন।
ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন তাকে জার্মান ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর। এবং আধুনিক বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বলে চিহ্নিত করেছেন।
আবার ঐতিহাসিক কেটলবি বলেছেন বিসমার্ক রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রভাব, এবং বিশ্বের বৃহত্তম অবদানের দিক থেকে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ সন্তান। বিসমার্ক জীবনের শেষ বছরে তিনি আত্মজীবনী রচনা কাটিয়ে দেন।
বিসমার্ক কূটনৈতিক রাজপুত বা জাদুঘর :-
অঙ্গুলি হেলনেই ইউরোপীয় রাজনীতির একটা সময় পরিচালিত হতো। রাজনৈতিক চতুরতার জন্য ইতিহাসে তিনি কূটনৈতিক জাদুকর নামে খ্যাত ছিলেন।
সুতরাং বলা হয় কূটনীতির জাদুকর বিসমার্ক ছিলেন ইউরোপীয় রাজনীতির প্রধান নায়ক ও নিয়ন্ত্রক। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক।
কিন্তু প্রজাতন্ত্রের অস্থিরতা ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে বিসমার্ক রাজতন্ত্রের উগ্র সমর্থক এ পরিণত হয়।
তিনি মনে করতেন, প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রের অধীনেই সমগ্র জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হবেন। এবং এর জন্য জার্মানিকে প্রাশিয়ার ভাবধারার প্রভাবিত করতে হবে। তিনি আরো জানতেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শুধু রাষ্ট্রকে দুর্বল করে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার কোন বিশ্বাস ছিল না।
গণতন্ত্রকারী আন্দোলনকারীদের বিসভার্ক দেশদ্রোহী এবং বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করতেন।
রাজতন্ত্র সকল সমস্যার জন্য তিনি বলেছিলেন "বক্ততা বা ভোটের দ্বারা নয়" রক্ত লৌহ নীতির দ্বারাই জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এবং তিনি এইও বলেছিলেন কেবলমাত্র সামরিক শক্তির দ্বারাই জার্মানির ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব অন্য কোনো পথে নয়।
বিসমার্ক এর প্রধান লক্ষ্য ছিল খন্ড জার্মানির ঐক্য সাধনে। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানির ঐক্য সাধন করেন। এবং বিভিন্ন কূটনীতি ও দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায় এই যুদ্ধ গুলি থেকে।
তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করেন এবং ইউরোপের শক্তিকে তিনি নিরপেক্ষ করে রাখেন। দেশ পূর্ণগঠনের জন্য তিনি বিভিন্ন সংবিধান স্থাপন করেন।
জার্মান সাম্রাজ্যের সংহতির জন্য তিনি নতুন সংবিধান তৈরি করেন। রেলপথ সম্প্রসারণ, মুদ্রানীতি সংস্কার, জাতীয় ব্যংক স্থাপন, আইনবিধির সংস্কার ইত্যাদি। এবং গির্জার ওপর রাষ্ট্রের কতৃত্ব স্থাপন তিনি জার্মানির সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধনে মনোযোগী হোন।
প্রাশিয়া জার্মানিতে শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করে এবং জার্মানির ইউরোপের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়।
বিসমার্কের বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য হলো ইউরোপের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। জার্মানিকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করা এবং ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে রাখা। এসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে ধরনের কূটনৈতিক ও জোট গঠন করেন তা কেবল মাত্র তার দ্বারাই সম্ভব।
অষ্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইত্যাদি নিয়ে তিনি যেভাবে কাজ করেন তা দেখে বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা তাকে কূটনীতির জাদুঘর বা কূটনীতির রাজপুত বলে অভিহিত করেছেন।
রাজনৈতিক দিক :-
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম উইলিয়াম যখন প্রাশিয়ার রাজা হলেন, তখন প্রাশিয়ার পরিষদ যে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল ছিল। নিজ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পেরেছিলেন।
তিনি বুঝেছিলেন যে, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এর অধীনে হয়ে উদারপন্থীদের সায় দিলে প্রাশিয়ার সংযোজন তথা জার্মানির ঐক্য সাধন সম্ভব নয়।
রাজতন্ত্রের সরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এবং সেই কারণে তিনি উদারপন্থীদের সাথে প্রথম উইলিয়ামের মতভেদ দেখা দেয়।
এই বিরোধ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্ব পদে সর্বযুগে পরিচিত শ্রেষ্ঠ কূটনীতিবিদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে বিসমার্ক প্রধানমন্ত্রী হন।
১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে এরপর তিনি রাষ্ট্রনীতিকে কাজে লাগিয়ে ডেনমার্ক অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ সম্পূর্ণ করেন। এবং শেষে সেডানের যুদ্ধের পর বিখ্যাত ফ্রাঙ্কফুর্টের সন্ধি সম্পন্ন করেন।
এর ধারা প্রাশিয়ার সংযোজন সম্পন্ন হয়। তথা জার্মানির ঐক্য সাধিত হয় এবং জার্মানি ইউরোপের মধ্যে একটি বৃহৎ শক্তি সম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিগণিত হয়।
জার্মানির ঐক্যবদ্ধ :-
জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বিসমার্ক অনেকগুলো উদ্দেশ্য ও নীতি গ্রহণ করেছিল সে সব উদ্দেশ্য ও নীতি গুলির সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।
- তিনি ছিলেন রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী।
- প্রাশিয়ার নিয়মতন্ত্র ভুলে গিয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার অধীনে অন্য অঞ্চল গুলির সংযোজক ঘটিয়ে সমগ্র জার্মানিকে তিনি রাজতন্ত্র সামিল করতে চেয়ে ছিলেন।
- সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে তিনি মনোনিবেশ করেছিলেন।
- সম সচিব ও সেনাপতিদের সাথে আলোচনা করে সামরিক শক্তিকে উপযুক্ত পরিমাণে আস্থাবান করে তিনি যুদ্ধের দ্বারা প্রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারে মনস্থ করলেন।
- জাড় দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের অধীন প্রাশিয়ার সাথে তিনি হাত মেলালেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে নিরপেক্ষ রইলেন। এবং ফ্রান্সের তৃতীয় নেপোলিয়নে ইউরোপীয়তার সুযোগ নিলেন।
রক্ত ও লৌহ নীতি :-
রক্ষণশীল রাজতন্ত্রের ঘোর সমর্থক অটো ফন বিসমার্ক মনে করতেন প্রাশিয়ার রাজতন্ত্রের দ্বারাই জার্মানির ঐক্যবদ্ধ সম্ভব। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর বিসমার্ক এর তেমন কোনো আস্থা ছিল না।
তিনি বলেন যে, বক্তৃতা দিয়ে বা সংখ্যাগরিষ্টের প্রস্তাব পাস করিয়ে দেশের সমাধান হবে না।
এরজন্য বিসমার্ক জার্মানির ঐক্য সাধনে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। এই প্রস্তুতিতে অবশ্য তাকে "ব্লাড এন্ড আইরন পলিসি (blood and iron policy)" বা রক্ত ও লৌহ নীতি অবলম্বন করতে হয়েছিল।
রক্ত ও লৌহ নীতি ছিল সাধারণত সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল।
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে থেকে বিসমার্কের বৈদেশিক নীতির মূল লক্ষ্য ছিল নবগঠিত জার্মান সাম্রাজ্যে সংহতি বজায় রাখা। ইউরোপে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং আধিপত্য রক্ষা করা।
দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জার্মানির মর্যাদা যেই অবস্থায় উপনীত হয়েছে তাকে সযত্নে রক্ষা করাই ছিল বিসমার্কের প্রধান উদ্দেশ্য।
একদিক দিয়ে তার নীতিকে প্রধানত আত্মরক্ষামূলক নীতি বলা যেতে পারে। এই নীতিকে সার্থক রুপে প্রদান করে বিসমার্ক যে কতৃত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, তারা তাঁর দ্বারা তার অসাধারণ বিচক্ষণতা ও কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।
প্রায় ২৭ বছর বিসমার্ক সমগ্র ইউরোপের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এবং সামরিক শক্তির দ্বারাই জার্মানির ঐক্যলাভ সম্ভব এ কথা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন।
শেষ পর্যন্ত বিসমার্ক সামরিক শক্তির সাহায্যে তিনটি যুদ্ধের দ্বারা জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। যথা -
- ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ।
- অস্টো-প্রাশিয়া যুদ্ধ।
- ফ্রাঙ্কো - প্রাশিয় যুদ্ধ।
ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ :-
শ্লেজউইন ও হলস্টিন প্রদেশে জার্মানির রাজ্যসীমার অন্তর্ভুক্ত হলেও আইনেত নষ্টর অধীন ছিল।
বিসমার্ক অস্টিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে । এই যুদ্ধে ডেনমার্ক পরাজিত হয় এবং রামকির দ্বারা দুটি প্রদেশের উপর তাঁর দাবি ত্যাগ করেন।
কিন্তু অপর দিকে দেখা যায় এই দুটি প্রদেশের কর্তৃত্ব নিয়ে অস্ট্রিয়া ও প্রাশিয়ার মধ্যে বিবাদ বাধে। এবং গ্যাস্টিনের সন্ধি ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বারা প্রাশিয়া শ্লেজউইগ ও অস্ট্রিয়া হলস্টিন প্রদেশ লাভ করেন।
অস্ট্রো - প্রাশিয়া যুদ্ধ :-
অস্ট্রেলিয়া কে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বিসমার্ক ইউরোপীয় রাজনীতিতে তাকে মিত্রহীন করার জন্য সচেষ্ট হন।
পোল বিদ্রোহের সময় রাশিয়া প্রাশিয়ার সাহায্য পেয়েছিল। এবং অস্ট্রো-প্রাশিয়া যুদ্ধের সময় বেভেরিয়া বেডেন, উইটেনবার্গ, হেনভার সহ বহু ছোট-বড় জার্মান রাষ্ট্র অস্ট্রিয়ার সপক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল।
আবার এস্তেনবার্গ, ম্যাকলেনবার্গ প্রভৃতি রাজ্য প্রাশিয়ার ভয়ে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছিল।
যুদ্ধের পর বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার প্রতি উদারতা দেখালেও যেসব রাজ্য অষ্ট্রিয়ার পক্ষে যোগ দিয়েছিল তাদের ক্ষমা করেননি। হেনভার, বেভেরিয়া প্রভৃতি প্রাশিয়ার সামরিক শক্তির একত্রীকরণ মেনে নিয়েছিল।
অর্থাৎ জার্মানির জাতীয় নেতা অপেক্ষা প্রাশিয়ার যুদ্ধজয়ী সেনাপতি হিসেবে বিসমার্ক ঐক্য কর্মসূচি রূপান্তরিত করেছিলেন।
ফ্রাঙ্কো - প্রাশিয়া যুদ্ধ :-
অস্ট্রিয়া পরাজয়ের পর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হয় প্রাশিয়া। অস্ট্রিয়া, ইতালি ও রাশিয়াকে নিরপেক্ষ রেখে বিসমার্ক ফ্রান্সকে যুদ্ধের জন্য পরোচিত করেন।
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স বিসমার্কের কূটনৈতিক জালে জড়িয়ে প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এবং সেডানের যুদ্ধ ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন পরাজিত হন।
ফ্রাঙ্কফুর্টের সন্ধির দ্বারা ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ১০মে, এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। এবং জার্মানির রাজনৈতিক ঐক্য সম্পন্ন হয়।
এই ভাবে বিসমার্ক কূটনীতির মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন। ঐক্য জার্মানির প্রথম সম্রাট হন কাইজার প্রথম উইলিয়াম।
ফ্রান্সকে বিচ্ছিন্ন করা নীতি :-
বিসমার্ক কার্যত ফ্রান্সকে ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার নীতি অনুসরণ করেন।
তিনি জানতেন যে, ফ্রান্সের পক্ষে ফ্রাঙ্কো প্রাশিয়া যুদ্ধে পরাজয়ের অপমান সহ্য করা সম্ভব নয়। সেইজন্য তিনি অসাধারণ কূটকৌশল প্রয়োগ করে ফ্রান্সকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
ফ্রান্সকে মিত্রহীন ও একা রাখার জন্য বিসমার্ক যে কূটনৈতিক নীতি গ্রহণ করেন। তার দ্বারা তিনি ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনে ব্রতী হন। এই মৈত্রী নীতি বিসমার্কের বিচক্ষণতার অপূর্ব নিদর্শন।
সমকালীন ইউরোপের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করেন। এবং তিনি একদিকে অস্ট্রিয়ার সাথে অপরদিকে ইতালি সাথে মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা করেন।
বিট্রেনের সাথেও তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি স্থাপনে খুবই উৎগ্রীব ছিলেন। তিনি রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে অগ্রসর হন।
বিসমার্ক জার্মানির ঐক্য সাধন করতে বিসমার্ক কতগুলো চুক্তি সম্পাদন করে সেগুলি হল নিম্নরূপ ---
তিন সম্রাটের চুক্তি :-
বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বিসমার্কের কূটনৈতিক দক্ষতা প্রথমেই প্রমাণিত হয়।
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই সময় অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও জার্মানি-র সম্রাটদের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি বা বন্ধুত্বের এর চুক্তি সম্পাদন করেন। এর নাম ছিল তিন সম্রাটের চুক্তি। যদিও এই বন্ধুত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
দ্বিশক্তি চুক্তি :-
বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সাথে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে একটি গোপন দ্বিশক্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তির দ্বারা স্থির হয় যে,
এক পক্ষ যদি রাশিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে অপরপক্ষ তাকে সাহায্য করবে। যদি ফ্রান্স অপর কোন পক্ষকে আক্রমন করে তবে অন্যপক্ষ নিরপেক্ষ থাকবে।
কিন্তু রাশিয়া যদি যুদ্ধে ফ্রান্সকে সাহায্য করতে অগ্রসর হয় তবে উভয়পক্ষ মিলিতভাবে যুদ্ধ করবে।
ত্রিশক্তি চুক্তি :-
বিসমার্কের চেষ্টার ফলে জার্মানি ও অষ্ট্রিয়াকে নিয়ে গঠিত দ্বিশক্তি চুক্তিতে ইতালি যোগদান করতে সমর্থ হয়। এর ফলে জার্মানি ও অষ্ট্রিয়া পররাষ্ট্রীয় আক্রমণ ও যুদ্ধ থেকে অনেকটা নিরাপদ অনুভব করে।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে এই শক্তি সভবায়ে ইতালি অনেকটা নিরাপদ অনুভব করে এবং ঐতিহাসিক ত্রিশক্তি চুক্তির উদ্ভব হয়।
এই চুক্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বলবৎ ছিল। অবশ্য পরে ইতালি এই চুক্তির পরিত্যাগ করে মিত্র শক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে।
পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্রগুলিকে গোষ্ঠীবদ্ধ করতে চাটুজ্জের দ্বারা বিসমার্কের অতুলনীয় রাজনীতির বিচক্ষনতা প্রমাণিত হয়।
রি - ইনসিওরেন্স চুক্তি :-
বিসমার্ক দ্বিশক্তি - ত্রিশক্তি চুক্তিতেও সন্তুষ্ট হয়নি। যদি চার মিত্র না হয় তাহলে জার্মানি পূর্ব রাশিয়াতে অসংরক্ষিত হয়ে পড়বে।
বিসমার্ক কোন উপায় রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা চুক্তি নতুবা নিরপেক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করতে বদ্ধপরিকর হয়। তার অসাধারণ কূটনৈতিক বিচক্ষণতার ফলে শেষ পর্যন্ত তার উদ্দেশ্য সিদ্ধী হয়।
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে রি-ইনসিওরেন্স চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তি দ্বারা রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দেয় যে তৃতীয় কোন রাষ্ট্র জার্মানি আক্রমণ করলে রাশিয়া নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবে।
এইভাবে বিসমার্ক অন্যান্য সাধারণ কুটকৌশল ও কূটনৈতিক দক্ষতার সাহায্যে জার্মানিকে ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেন।
বিসমার্কের সাফল্যের মূল্যায়ন :-
বিসমার্কের দীর্ঘ কার্যকলাপ ও ততোধিক দীর্ঘ কার্যবলি আলোচনা করেলে সম্ভবতই এই সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে যে, বিসমার্ক ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ছিলেন।
তার বিচক্ষণতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও কূটকৌশল ইউরোপে নতুন জার্মানির সৃষ্টি করেছিল। এবং এই নবসৃষ্ট জার্মানি ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।
আবার, ঐতিহাসিকের কেটলবির মতে, রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব এবং বিশ্বের বৃহত্তম অবদানের দিক থেকে তিনি ছিলেন এ যুগের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
১৮৭১ - ১৮৯০ কালপর্বে বিসমার্ক ছিলেন ইউরোপের রাজনীতির প্রকৃত নিয়ন্তা। এইসব জার্মানি ইউরোপের রাজনীতিতে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে।
জার্মান রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য বিসমার্ক ইউরোপে শান্তি বজায় রাখা নীতি ঘোষণা করেন। এবং ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিকে নিজ পক্ষে এনে তিনি ফ্রান্সকে নির্বন্ধক করে রাখতে সমর্থ হয়।
এভাবে Germany-র স্বার্থ ও নিরাপত্তা বজায় থাকে। কুটবজায় থাকে কুটকৌশল বিসমার্ক ইউরোপের যে মৈত্রী ব্যবস্থা গড়ে তোলেন তা অসাধারন। কূটনীতিকে তিনি শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেন।
2 মন্তব্যসমূহ
AMI BHALOBASI
উত্তরমুছুন😃😎😋🙂🙂🙂😑😚😚🙂🙂🤗😘😍🤗🙂🙂☺☺😚😐😚☺☺☺🙂🙂🙂🤗🙄🤗🤗😎🙂😎😎😎😎😍☺☺😑☺🙂🙂😎😎😎😍😍😍😍😎☺☺😶🙂😄😅😄😶😑😋😎😎😎😄
উত্তরমুছুন