কলকাতা কেন্দ্রিক নবজাগরণ
ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ঘটেছিল। যদিও এই নবজাগরণের প্রথম সূচনা ঘটে ছিল ফ্রান্সে।
সমকালীন বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর প্রাচীন প্রথাকে ভেঙ্গে ফেলে নতুনের আলোকে সমাজ গড়ে তোলার আদর্শ তৈরি হয়েছিল। সে যুগে বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, ডিরোজিও, বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় নবজাগরণে এক আদর্শ সৃষ্টি করেছিলন।
সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এক নতুন জীবনের আলো দেখেছিল। শিক্ষা, সমাজ, রাজনীতি, নারী জাতি, সব ক্ষেত্রেই নবজাগরণের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল।
INDEX
- ভূমিকা বা সূচনা
- বঙ্গীয় নবজাগরণের সংজ্ঞা
- নবজাগরণ এর অর্থ
- রাস্মরণীয় ব্যক্তি
- ঊনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ও প্রকৃতি ও পর্যালোচনা
- ইতালিয় রেনেসাঁসের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের পার্থক্য
- ইউরোপীয় রেনেসাঁস
- কলকাতা কেন্দ্রিক নবজাগরণ ভাবনার বাইরে বেরোনোর প্রয়াস আজও উপক্ষিত থেকে গেল
- বাংলা নবজাগরণ ছিল কলকাতা শহর কেন্দ্রিক মন্তব্যটি বিশ্লেষণ
- বাংলায় নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য
- নবজাগরণের ত্রুটি
- অনুকূল পরিস্থিতি অভাব
- নবজাগরণের সীমাবদ্ধতা
- গুরুত্ব
ভূমিকা বা সূচনা :-
বঙ্গীয় নবজাগরণের সংজ্ঞা :-
বঙ্গীয় নবজাগরণ বলতে মূলত চোদ্দো-ষোল শতকের ইতালিয় সাহিত্য, শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও রাজনীতির বিকাশ কে বোঝায়। এবং অপরদিকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে ঊনিশ শতকের মধ্যবিত্ত বাঙালির সমাজে এক যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী আড়োলনের সূচনা দেখা দেয়। এর ফলে তৎকালীন সমাজে ধর্ম, শিক্ষা, সাহিত্য, দর্শন ও রাজনীতি জীবনের সর্বক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায় বা পরিলক্ষিত হয়। তাঁকেই সাধারণত ঐতিহাসিকরা "বঙ্গীয় নবজাগরণ" বা "Bengal Renaissance" বলে অভিহিত করেছেন।
নবজাগরণ এর অর্থ :-
স্মরণীয় ব্যক্তিরা:-
ঊনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ও প্রকৃতি ও পর্যালোচনা :-
" It was truly Renaissance wider deeper become and more revolutionary than that of Europe after the fall of Constantinople...."
"আমাদের রেনেসাঁস আন্দোলন কে বৈদেশিক ধারা উপনিবেশিক শাসনের কাঠামোর মধ্যে বিকাশ লাভ করতে হয়। সুতরাং প্রাচীন সংস্কৃতির পুর্ন মূল্যায়ন করে প্রাচীন সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠা প্রাণদায়িনী শ্রোতে অবগাহন করতে আমাদের নবজাগরণ তার পূর্ণ প্রাণশক্তি লাভ করতে পারেননি। বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতিকে স্বতন্ত্র ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে তুলনা না করে আলাদা ভাবে এটা করা উচিত।"
" বাংলার নবজাগরণের আমরা দুটি পৃথক ধারা সমন্বয় দেখতে পাই। যথা পাশ্চাত্য উদারপন্থী ভাবধারা এবং পূর্ণরুজ্জীবনবাদী প্রাচ্যবাদী। প্রথম ভাব ধারার প্রভাবে সমাজ সংস্কারের চেষ্টা সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রকৃতি ঘটে। দ্বিতীয় ধারা অর্থাৎ পূর্ণরুজ্জীবনবাদী অনুযায়ী বলা যায় যে সরকারি আইন এর সাহায্যে সামাজিক কুসংস্কার ও কুপ্রথারদ করার চেষ্টায় ভুল নীতি, সরকারের হস্তক্ষেপই তা দূর হতে পারে। নরহরি কবিরাজ সঠিকভাবে মন্তব্য করেছেন। "
ইতালিয় রেনেসাঁসের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের পার্থক্য :-
ইতালির রেনেসাঁসের সঙ্গে বাংলা নবজাগরণের তুলনা করে বলা হয় মধ্যযুগের তন্দ্রা, আত্মবিশ্বাস, কুসংস্কার থেকে যেমন রেনেসাঁসের ইতালীয় প্রথম মুক্তির পথ দেখায় তেমনি ভারতে মধ্যযুগীর আত্মবিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে ঊনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ মুক্তির পথ দেখায়।
১| ইতালিয় রেনেসাঁস ধ্রুবদী সাহিত্য যথা গ্রীক,ও ল্যাটিন সাহিত্যের যে ব্যাপক চর্চা হয়, বাংলাতেও প্রাশ্চ্যবাদীরা এরুপ ভারতে প্রাচীন সংস্কৃত ও মধ্যযুগের ফরাসি সাহিত্যের চর্চা করেন।
২| অপরদিকে পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সাহিত্য গ্রিক ও ল্যাটিন সাহিত্যের জ্ঞান ভান্ডার ইংরেজি সাহিত্যের মধ্য দিয়ে বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
৩| ইতালি রেনেসাঁস যে স্বাধীন অনুসন্ধানী, যুক্তিবাদী মানসিকতা দেখা যায়, 'বাংলায় ইয়ংবেঙ্গল ডিরোজিও' গোষ্ঠী তীব্র যুক্তিবাদী দৃষ্টি ও প্রচলিত কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনে তার প্রতিফলিত হয়। ৪শ্র কিছুটা প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি কিছুটা প্রতীয্য বিশেষত ইংল্যান্ডের সংস্কৃতির মিশ্রণ বাংলা।
ইতালি রেনেসাঁস মানবতাবাদ আমরা রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বিকশিত হতে দেখি। উপরক্ত যুক্তিতে উনিশ শতকের নবজাগরণকে অনেকে বাংলার রেনেসাঁস থাকেন। তবে অনেকে তীব্র আপত্তি করেন, তাদের মধ্যে বাংলার নবজাগরণকে কখনো কখনো প্রকৃত রেনেসাঁস বলা যায় না।
সম্প্রতি dr. Amlesh tripathi বলেছেন, বাংলার নবজাগরণের পেক্ষাপট ও প্রকৃতি সঙ্গে ইতালির রেনেসাঁসের তুলনা অর্থহীন। ১২ ও ১৩ শতকের বাণিজ্য বিপ্লব, নগর বিপ্লব প্রভৃতি অর্থসামাজিক পরিবর্তন ইতালিয় তথা ইউরোপীয় রেনেসাঁসের যে মজবুত ও ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি রচনা করে।
বাংলার নবজাগরণের পশ্চাতে সেই প্রেক্ষাপট ছিল অনুপস্থিত অশোক মিত্রের মতো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদার সম্প্রদায় কৃষকের কাছ থেকে শোষিত অর্থে ধনশালী হয়ে কলকাতায় বসবাস করতেন। তারাই ছিলেন বাংলার নবজাগরণের পৃষ্ঠপোষক।
বাংলার নবজাগরণের বেশিরভাগ নায়ক ছিলেন সরকারি কর্মচারী। বিদ্যাসাগর ছিলেন প্রধান শিক্ষক। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীনচন্দ্র, রামলাল ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ঠাকুর পরিবার। ঠাকুর পরিবার বাণিজ্য লক্ষীলাভ করেন। সুতরাং এর নায়কদের মধ্যে ফ্লোরেন্সের বুজুর্য়া শ্রেণি প্রতিছায়া খোঁজা নিষ্ফল এরা ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার ছাড়া আর কোন বলিষ্ট শিল্পে সাহিত্যকর্মে উদ্দ্যোগ নিতে সক্ষম ছিলেন না।
বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে নতুন সৃষ্টির জোয়ার দেখা দেয়, তারা প্রেরণা মূলত ইংরেজি সাহিত্য থেকে। গ্রিক ও ল্যাটিনের সাহিত্য থেকে এই প্রেরণা আসেনি। সংস্কৃত সাহিত্য প্রভাব নিশ্চয় ছিল। একথা অবশ্যই বলা উচিত বঙ্গীয় রেনেসাঁসের রুপকাররা বিশেষ করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত সমন্বয়বাদিরা প্রাচীন ভারতে সংস্কৃত সাহিত্য দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। মোটকথা , বাংলার নবজাগরণের বীজ ছিল মিলার সাহিত্য কেবলমাত্র ইংরেজি সাহিত্যের দ্বারা প্রভাবিত ছিল না। তার প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যের দ্বারাও প্রভাবিত ছিল।
ইউরোপীয় রেনেসাঁস :-
১| রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সামাজিক ভিত্তি :-
একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেখানে শিখা ছিল ধর্মকেন্দ্রিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসারের ফলে সাফিচার ও অন্যান্য ঐতিহাসিকের মতে, ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দের বহু পূর্বে থেকেই ইউরোপে বিশেষ করে ইতালিতে একটি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। এই শিক্ষিত সম্প্রদায় ছিল নবজাগরণের অগ্রদূত। মধ্যযুগের শেষদিকে ইউরোপে নানা স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
প্রথমে ইতালির র্যাওলা, মিলান প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে প্যারিসে অক্সফোর্ড, কেন্দ্রিক, হ্যামবুর্গ প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এর ফলে সাধারণ শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এর আগে গির্জায় ছিল ইউরোপেধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার হয় এই শিক্ষিত শ্রেণী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অ্যারিস্টোটলের তর্ক শাস্ত্র ও দর্শন এবং গ্রিক ও আরবিয় দর্শন ও বিজ্ঞানের পাঠ নিয়ে মানুষের মনে যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটতে থাকে।
এই আলোকে মধ্য যুগে প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারের কুসংস্কারকে আক্রমণ করে। টমাস অ্যাকুইনাস, রজারবেকন, প্রভৃতি ছিলেন এই শিক্ষিত শ্রেণীর পুরোধা। এদের সমালোচনার ফলে গির্জার প্রভাব কমতে থাকে। রজারবেকন বলেন, " সত্য কোন নির্দিষ্ট অপরিবর্তনীয় বিষয় নয়, এটা সময় অনুযায়ী পরিবর্তনশীল" এই শিক্ষিত শ্রেণী ও ধর্মযাজকদের চেষ্টার মধ্যযুগের বিদ্যালয়গুলিতে ল্যাটিন, সাহিত্য, আরবীর বিজ্ঞান এবং রোমান আইনের চর্চা চলে। এইভাবে রেনেসাঁস সামাজিক ভিত্তিভুমি আগেই তৈরি হয়।
২| ইউরোপীয় সমাজে রেনেসাঁসের প্রভাব:-
পঞ্চদশ শতকের শেষের দিকে ইতালিতে যে রেনেসাঁস বা নবজাগরণের প্রথম সূত্রপাত ঘটেছিল, তা কালক্রমে কমবেশি ইউরোপের সব দেশে বিস্তৃত লাভ করে। সমকালীন ইউরোপের সমাজ ব্যবস্থাকে নবজাগরণের ব্যাপক প্রভাবিত করেছিল। বস্তুত রেনেসাঁস ইউরোপীয় সমাজ জীবনে যথেষ্ট পরিবর্তন এনেছিল।
মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে যেভাবে সামাজিক ও মানসিক ভাবে গ্রাস করে রেখেছিল তার যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটল। মানুষ ক্রমশ যুক্তিবাদী হয়ে উঠল। যে ধর্মীয় কুসংস্কার এবং অন্ধ বিশ্বাস মানুষকে রুদ্ধ করে রেখেছিল, রেনেসাঁসের আলোকচ্ছটায় মানুষ তা থেকে মুক্তি পেল। রেনেসাঁসের আবির্ভাব এর ফলে গ্রিক সাহিত্যের উৎকর্ষতা প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষিত হলো।
অপরদিকে ধীরে ধীরে পূর্বপ্রচলিত ইশ্বর তত্ত্ববিদ্যায় প্রচলিত হ্রাস পেতে থাকে। এককথায় ইউরোপীয় দেশগুলি গ্রিক সাহিত্যের অগ্রসর হতে থাকে। নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে গ্রিক সাহিত্যনুশীলনের ব্যাপারে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা কে বিখ্যাত গ্রিক শিক্ষাপ্রাপ্ত পণ্ডিতেরা প্রচারকার্যের মাধ্যমে বাস্তব বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন।
এইভাবে ইংল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে প্রাচীন গ্রীক ও ল্যাটিন সাহিত্যনুশীলনের ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আধুনিক সমাজের অগ্রগতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আগে মানুষ সাহিত্য, বিজ্ঞান - চর্চার ব্যাপারে উৎসাহী ছিল না। কিন্তু এখন নবজাগরণের প্রভাবে সাহিত্য ছাড়াও বিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অতি আগ্রহ সহকারে পাঠ করতে থাকে। প্লেটো ও অ্যারিস্টোটলের দর্শন তত্ত্বের পুনরুদ্ধার ঘটার সাহিত্য সমৃদ্ধশীল হয়ে ওঠে। নতুন নতুন কবিতা, নাটক, সংগীত প্রভৃতির দিকে জনসাধারণের ঝোঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে।
এককথায় রেনেসাঁস সমাজের যাবতীয় কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস ইত্যাদি মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনাকে এবং সমাজ ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তুলেছিল। কিন্তু সবকিছুর উপরে রেনেসাঁস ভালো প্রভাব পড়েছিল বলে মনে করলে ভুল হবে বস্তুত রেনেসাঁস জনিত জাগরনের ফলে পোপের অধিক আধিপত্য মুক্ত একটি সমাজ গড়তে গিয়ে জনগণ নৈতিক ভাবনীতির দিকে ধাবিত হয়। তাদের নৈতিকতার মান অনেক নেমে যায় আধিপত্যের অভাবে।
কলকাতা কেন্দ্রিক নবজাগরণ ভাবনার বাইরে বেরোনোর প্রয়াস আজও উপক্ষিত থেকে গেল :-
১| সতীদাহ প্রথা বর্জন :-
২| ব্রাহ্মসমাজ গঠন:-
৩| বিধবা বিবাহ :-
৪| স্ত্রীশিক্ষা প্রচলন:-
৫| বহু বিবাহ বাল্য বিবাহ:-
এখানে লেখিকা প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান প্রজন্মের নবজাগরণ সম্পর্কে- বিচ্যুতি কি এক বৃহত রাষ্ট্রের প্রকল্পের অন্তর্গত? নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের ফলে আমাদের ইতিহাস বিচ্ছিন্নতা শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস কে ভুলিয়ে বস্তুবাদী ভোগকেন্দ্রিক অনুগত নাগরিক তৈরী করে মাত্র। প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।অনুষ্টুপ -এর মতে প্রকাশনার কাছ থেকে বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসকে ফিরে দেখা নিয়ে সংকলনে কিছুটা প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক।
গুণমানের সঙ্গে পরিমাণ মেলানোর চেষ্টা ও হয়তো সেই প্রত্যাশায় আগেই হোঁচট খেতে হয়। দু-একটি ইংরেজি নিবন্ধে ভাষাগত প্রমোদ বেশ দৃষ্টি কটু। অপরদিকে মুখবন্ধে নবজাগরণের ভৌগোলিক মাত্রার কথা বলা হয়ে থাকলেও দুর্ভাগ্যবশত সংকলনের শিরোনাম তার সহজবোধ্য প্রতিফলন ঘটেনি। এমনকি দু-একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া নিবন্ধ গুলিতেও কলকাতাকেন্দ্রিক নবজাগরণ ভাবনার বাইরে বেরোনোর প্রয়োগ দেখা যায়নি। গান ও খেলার মতো বিষয়কে এখানেও নবজাগরণের পুর্ননির্মাণে না দেখার আক্ষেপ থেকেই যায়।
বাংলা নবজাগরণ ছিল কলকাতা শহর কেন্দ্রিক মন্তব্যটি বিশ্লেষণ :-
পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে ঊনিশ শতকের মধ্যবিত্ত সমাজে যে আধুনিক মনোভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখা দিয়েছিল যার ভিত্তি ছিল যুক্তি ও মানবতাবাদ। সাধারণত ঊনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের ব্যাপ্তি বা পরিসর খুবই সীমিত ছিল। এটি ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে বলা হয়ে থাকে বাংলা নবজাগরণ ছিল কলকাতার কেন্দ্রিক।
এই নবজাগরণ কলকাতার বাইরে গ্রাম বাংলায় এর প্রসার তেমন ঘটেনি এবং গ্রাম বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর এর জনগণের কোনো সুফল পায়নি। বাংলার জাগরণ শুধু পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। যাদের মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক বলা হয়।
এই কারণে অধ্যাপক অনিল শীল কলকাতাকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকদের এই নবজাগরণকে "এলিটিস্ট আন্দোলন" বলেছেন। কলকাতা নবজাগরণের যে ঢেউ আছড়ে পড়েছিল তার ছিটেফোঁটাও গ্রামবাংলায় পরিলক্ষিত হয়নি। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের সেন্সাস কমিশনার অশোক মিত্র সেন্সাস রিপোর্টে এটি তাই " So Called Renaissance " বলেছেন।
বাংলায় নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য:-
১| কুসংস্কার:-
ঊনিশ শতকের এই নবজাগরণ সাধারন মানুষকে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রদান করে মানুষের মন থেকে নানা ধরনের কুসংস্কার দূরীভূত করে। এবং এক আধুনিক চিন্তা ধারার জন্ম দেয়।
২| নবজাগরণের তৃতীয় শ্রেণীর উদ্ভব:-
বাংলা নবজাগরণ একটি তৃতীয় ধারার' উদ্ভব হয় যাকে আমরা সমন্বয়বাদি ধারা বলতে পারি। প্রাচীন যুগে যা কিছু শ্রেষ্ঠ ও যুক্তিসিদ্ধ তার সঙ্গে প্রতিচ্যের জ্ঞান বিজ্ঞানের যা কিছু শ্রেষ্ঠ সমন্বয়ের দ্বারা বাংলা তথা ভারতের ভবিষ্যতের অগ্রগতির পথ নির্দেশ ছিল এই ধারার বৈশিষ্ট্য। এর প্রধান প্রবক্তা ছিলেন আধুনিক ভারতের জনক ভারত পথিক রামমোহন রায়।
নবজাগরণের ত্রুটি :-
অনুকূল পরিস্থিতি অভাব :-
নবজাগরণের সীমাবদ্ধতা :-
এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ নিজ নিজ স্বার্থে নবজাগরণ কে ব্যবহার করেছিল। হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা নবজাগরণকে নিজধর্মের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে নবজাগরণকে সংকীর্ণ করে তুলেছিল। পাশাপাশি মুসলিম সমাজের প্রবক্তারা নবজাগরণকে ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রয়োগ করেছিল। এবং এইভাবে নবজাগরণ একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এর ফলে নবজাগরণ সকলশ্রেণীর সমাজ তথা মানব জাতির কল্যাণ কে ত্বরান্বিত করতে পারেননি।
গুরুত্ব :-
সুতরাং বলা যায় আদ্যিকালের ধ্যান - ধারণা থেকে নতুন পথের সন্ধান দেয়। তাই বাংলায় নবজাগরণের গুরুত্ব অপরিসীম। ঊনিশ শতকের বাংলার এই নবজাগরণ আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
Source:[Wikipedia];[Byjus.com];[source]
0 মন্তব্যসমূহ